বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটঃ COVID-19 বা করোনার ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর পাশাপাশি মৌসুম পরিবর্তনের ফলে দেখা দিচ্ছে অন্যান্য রোগ ব্যাধী। রোগ ছোট হোক কিংবা বড়, স্রষ্টার পর একজন অসুস্থ রোগী ও তার পরিজনদের একমাত্র ভরসা হল ডাক্তার বা চিকিৎসক। আর এখন এই চিকিৎসক দের জীবন টাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে। সমগ্র বিশ্ব এখন লকডাউন হলে ও চিকিৎসক দের জন্য লকডাউন বলে যেন কিছুই নেই। তাদের কে সবসময়ই অবস্থান করতে হচ্ছে ঘরের বাইরে, হাসপাতালে। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেখতে হচ্ছে একের পর এক রোগি। তার মধ্যে কোন রোগি করোনা আক্রান্ত তা আগে থেকে বোঝার নেই কোন উপায়। যেই সকল চিকিৎসক সরাসরি করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিয়োজিত তারা কঠোর নিরাপত্তার মধ্য় দিয়ে অবিরাম চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। তারপরও তারাই রয়েছে সর্বচ্চ ঝুঁকিতে। এমন টাই জানিয়েছে WHO (World Health Organization) –এর মহাপরিচালক “তেদ্রাস আধানম”

গত সোমবার WHO- এর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি তে  তেদ্রাস আধানম জানান, "প্রত্যেক রাষ্ট্রের এই মুহূর্তে নিজ নিজ দেশের চিকিৎসকদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম যথাযথ ভাবে সরবরাহ করতে হবে। এমনকি সাধারন অসুস্থতায় আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেবার ক্ষেত্রে ও নিতে হবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। কারন তারাই যদি করোনার শিকার হয় তবে সাধারন মানুষদের চিকিৎসা কে দিবে? তাই তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো চ্যুতি রাখা যাবে না।“


বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটঃ এদিকে দক্ষিন এশিয়ান রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে করোনা ঝুঁকিতে বাংলাদেশের অবস্থান ৩য়। ভারত ও  পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।
এমনটাই জানিয়েছে SAPHA (South Asian Public Health Association) –এর প্রেসিডেন্ট ইওস্রা ইউসুফ। তিনি আরো বলেন, “এখনই সচেতন না হলে নতুন আরেক টি ইতালির মত চিত্র দেখা যেতে পারে এই অঞ্চল টিতে”। 
এর পাশাপাশি তিনি শ্রীলংকার সার্বিক অবস্থার উন্নতি দেখে বলেন,”লকডাউন এর পরিপূর্ণ অর্থশ্রীলংকানরা খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে"।



খোলা আলোচনাঃ যেখানে উন্নত বিশ্বে সাধারন মানুষ যে যার জায়গা থেকে সচেতনতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে, সেখানে বাংলাদেশে চলছে ত্রান নিয়ে লুকোচুরি। রক্ষক হয়েছে ভক্ষক। গরীবের জন্য বরাদ্ধ করা টাকা ও যাবতীয় সরঞ্জামাদি হয়েছে কিছু ক্ষমতাবানদের হাতে কুক্ষিগত। টেলিভিশন খুললেই দেখা যাচ্ছে চেয়ারম্যান মেম্বারদের চাল আর তেল চুরির খবর। এই লজ্জা পুরো জাতির। কারন জাতি হিসেবে আমরা কতটা অসচেতন তা বলার উপেক্ষা রাখে না। আমরা আমদের অধিকার আদায় ও দায়িত্ব পালন উভয় ক্ষেত্রেই অসচেতন। মনে রাখতে হবে ভোট দেয়া যেমন আমাদের অধিকার, তেমনি দুর্যোগের সময় এই ত্রান আমদের অধিকার। এটি কারো দান নয়। ধনী গরীব সকলের জন্যই এই অধিকার। আমাদের অসচেতনতা আমাদের করে রাখে দুর্বল। আর এই দুর্বলতা কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতাবানরা। নির্বাচনের সময় যেমন চুরি হয় ভোট, একই ভাবে এই দুর্যোগের সময় চুরি হচ্ছে ত্রান। তাই এখনই সময় সচেতন হবার। না হলে এর চরম মুল্য দিতে হবে আপনাকে এবং আমাকে। এখন আসি আজকের মুল আলোচনায়।

বিগত ১ দশকে  বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার তেমন কোনো উন্নতি চোখে পড়ে না। তাই অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের চিকিৎসকদের ঝুঁকিটা অনেক বেশি। তবে যারা মনে করে জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণের মধ্য দিয়ে আমরা চিকিৎসা ব্যবস্থায় ঢের উন্নতি সাধন করেছি তাদের সাথে তর্ক করে লাভ নেই। কারন, আমাদের দেশে এখনো রয়েছে পর্যাপ্ত আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব। আর এই দুর্যোগের সময় চিকিৎসকেরা পাচ্ছে না পর্যাপ্ত পরিমাণে তাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রী। পিপিই, এন-৯৫ মাস্ক, গ্লাভস, সবকিছুতেই রয়েছে ঘাটতি। আর যে পরিমানে সরবরাহ হচ্ছে তার মান নিয়েও রয়েছে অনেক প্রশ্ন। দেশের এখন পর্যন্ত ডাক্তার ও নার্স সহ ১৫০ জনের ও বেশি করোনা আক্রান্ত  হয়েছেন বলে জানা গেছেন। এখন এখানে কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত না করলেই নয়। তা হল, ডাক্তার রা নিঃসন্দেহে আট-দশ জন সাধারন মানুষের চেয়ে বেশি সচেতন। তাহলে তাদের আক্রান্তের হার এত বেশি হবার কারন কি? এর কারন রয়েছে অনেক। 
প্রথমেই বলতে গেলে আসে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সমগ্রী সরবরাহ না করা। এতে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তাদের কে সকল রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হচ্ছে। 
দ্বিতীয়ত, মানসিক দুশ্চিন্তা। একজন চিকিৎসক যখন প্রতিদিন ঘর থেকে বের থেকে হচ্ছে তখন তাকে ও থাকতে হচ্ছে করোনায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে। এদিকে কিছু কিছু সমাজের লোক তাদের এই বাইরে বের হবার বিষয় টা কে দেখছে নেতিবাচক ভাবে। সুনামগঞ্জের এক নার্স কে তার বাড়ি তে যেতে বাধা দেয়া হচ্ছে –“যমুনা টিভি”। এরকম আরও অনেক কারণে চিকিৎসা কর্মী দের থাকতে হচ্ছে মানসিক দুশ্চিন্তায়।
 চিকিৎসকদের আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি হওয়ার পিছনে আর একটি অন্যতম কারন হল উপযুক্ত প্রশিক্ষনের অভাব। 
সবকিছু মিলিয়ে বলতেই হচ্ছে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি হতে যাচ্ছে অনেক বেশি ভয়াবহ।