নিশ্চয়ই, আমরা জানি যে “করোনা ভাইরাস” বা “COVID-19”, যার আগমন এমন ভাবে হয়েছে, যার কোন প্রতিকার এখন পর্যন্ত নেই। একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ এবং ট্র্যজিক মুহূর্ত এটি। শুধু মাত্র কিছু প্রতিরোধ মুলক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এই ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব। সমগ্র বিশ্ব এখন একটি আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে দিন যাপন করছে। বিশ্বের উন্নত দেশ গুলি নিজেদের সর্বচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এর প্রতিকার এর জন্য। আমেরিকা, কিউবা, চীন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া প্রত্যেক রাষ্ট্রই চেষ্টা করছে এই করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারের। কিন্তু এত চেষ্টার ফলাফল এখন পর্যন্ত শুধুই ব্যর্থতা। ইদানিং বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল থেকে জানা যাচ্ছে জাপানের “আভিগান” নামক প্রতিষেধকের সফলতার কথা।  

তারপরও কিছু প্রশ্ন রয়েই যায়, “চারিদিকে যেখানে এত মৃত্যুর খবর সেখানে কি আদৌ এর পরিপূর্ণ কোনো চিকিৎসার বাস্তবায়ন সম্ভব?”

হ্যাঁ, এখন না হলেও একটি সময় হয়ত সম্ভব হবে। কিন্তু ততদিনে এই মৃত্যুর হার আর সংখ্যা যে কত হবে সেখানেই রয়েছে অনেক বড় একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন।


“কেমন হতে যাচ্ছে বিশ্বের রুপ?”

হ্যাঁ, একটি সার্বিক পরিবর্তন আসতে চলেছে বিশ্ব জুড়ে।। তবে আসুন জেনে নেই কি কি পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে চলেছে পুরো বিশ্ব। 


জনজীবনঃ সাধারন মানুষের জীবনে নেমে আসছে এক ভয়াবহ দুর্যোগ। এটা বলা কঠিন যে কখন কে করোনার ভয়াবহ ছোবলের শিকার হবে। ৪০-৫০ বয়সী প্রবীন দের এই ক্ষেত্রে মৃত্যু ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। WHO (World Health Organization) –এর তথ্যমতে, এই করোনা ভাইরাসে মারা যেতে পারে বিশ্বের ২০ লক্ষ মানুষ, যা সত্যিই ভয়াবহ। একই দিকে রয়েছে সাধারন মানুষের অসাবধানতা ও অসতর্কতা, যা এই করোনার ভয়াবহতাকে বাড়িয়ে তুলছে কয়েকগুন বেশি।
এখন আসি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের কথায়। কোভিড – ১৯ এর আক্রান্ত এর চেয়ে বেশি ভয়াবহ ভাবে আক্রান্ত হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সাধারন জনগণ। উন্নত দেশ গুলো তে সরকার যেভাবে জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে পারে, তা মধ্যম আয়ের দেশ গুলো তে বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন।

অর্থনীতিঃ লকডাউনের এই সময়ে অফিস, আদালত সব কিছুই বন্ধ। ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি সকলেই আর্থিক ভাবে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ। এদিকে, সাধারন মানুষ যারা কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করে তাদের পরিবারে নেমে এসেছে ভয়াবহ দারিদ্রতা। পুরো বিশ্বেই দেখা দিচ্ছে মন্দা ভাব। ইতোমধ্যেই শেয়ার বাজারে নেমে এসেছে এক ভয়াবহ ধস। আশঙ্কা করা হচ্ছে এমন পরিস্থিতি যদি আরও কয়েক মাস বিরাজ করে তবে শুধু মধ্যম আয়ের দেশ গুলোই নয় বরং উন্নত দেশ গুলোতেও দেখা দিতে পারে বেকারত্ব।
জাতিসংঘ (UN) আশঙ্কা করছে, সমগ্র বিশ্ব জুড়েই দেখা দিতে পারে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। এর কারণ হল, লক ডাউনের কারনে শুধু অফিস আদালত নয়, কৃষি ক্ষেত্রে ও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এক দিকে যেমন রয়েছে করোনার ভয়, অন্য দিকে তেমনি রয়েছে পঙ্গপালের আক্রমনের আশঙ্কা।
WEF (World Economic Forum) –এর তথ্য অনুযায়ী, যদি এমন পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হয়, তবে বৈশ্বিক অর্থনীতি ১০০ বছর পিছিয়ে যেতে পারে।

প্রথমত, দেশি-বিদেশি উৎপাদন খাত ও বাজার ব্যবস্থাপনা হতে পারে বিপর্যস্ত। যা বাড়াবে বেকারত্ব। কমবে রেমিটেন্স আয়। এর সরাসরি প্রভাব পরবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ গুলো তে।

দ্বিতীয়ত, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিবহন ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন কমছে আমদানি ও রপ্তানি, তেমনি প্রভাব পড়ছে পর্যটন শিল্পে। এর প্রভাব পড়বে বৈদেশিক অর্থনীতিতে।

তৃতীয়ত, বিভিন্ন উৎপাদন শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, বাজারে পড়তে পারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাড়তি সংকট। এতে করে বাড়তে পারে পন্যের দাম।

এখন, পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হলে, সকল শিল্প কারখানাই হয়ে যেতে পারে বন্ধ। একদিকে আর্থিক সংকট, অন্যদিকে পণ্য সংকট। সবমিলিয়ে একটা দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার সম্ভাবনা।  

প্রকৃতিঃ যেখানে সমগ্র বিশ্ব এখন গ্রহবন্দি, ঠিক তখন প্রকৃতি যেন হয়ে উঠেছে পূর্বের চেয়ে ও অনেক বেশি সতেজ। কমেছে বৃক্ষ নিধন  এবং পশু-পাখির অবাধ শিকার। বন্ধ হয়েছে যুদ্ধ বিগ্রহ। কমেছে যানবাহনের কালো ধোঁয়ার নির্গত হওয়া।  
পরিবেশে বেড়েছে অক্সিজেনের মাত্রা। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, পরিবেশ দুষন কমেছে ৫০ শতাংশ।  

এখন একমাত্র উপায় হল  ব্যক্তিসচেতনা আর স্রষ্টার দয়া। হতে পারে এটি আমাদেরই কৃতকর্মের ফল। নিশ্চয়ই স্রষ্টা জুলুম বরদাস্ত করেন না।

সচেতনতায় এগিয়ে শ্রীলংকা - Read More